রবিবার ১৮ মে ২০২৫ - ১১:৩১
দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তিই হচ্ছে নির্যাতিতের পক্ষে অবস্থান ও প্রতিরোধমূলক কূটনীতির ভিত্তি

রাষ্ট্রপতি বলেন, তাকওয়া অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভুল পথচলা। আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর ভাষায়, আমাদের দুনিয়ার পেছনে ছুটতে নয়, বরং তা আমাদের পেছনে ছুটলেও আমরা যেন অনাসক্ত থাকি।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ রবিবার সকালে তেহরানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন "প্রতিরোধমূলক কূটনীতি ও শহীদদের স্মরণ" উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসউদ পেজেশকিয়ান। তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হযরত আলী (আ.)-এর উইল থেকে কিছু অংশ পাঠ করেন এবং তাকওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, তাকওয়া অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভুল পথচলা। আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর ভাষায়, আমাদের দুনিয়ার পেছনে ছুটতে নয়, বরং তা আমাদের পেছনে ছুটলেও আমরা যেন অনাসক্ত থাকি।

তিনি বলেন, ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরল জীবনধারাকে বেছে নিয়েছেন। এই দুনিয়াবিমুখতাই প্রতিরোধমূলক কূটনীতি, নির্যাতিতের পক্ষে অবস্থান এবং অত্যাচারীর বিরোধিতার ভিত্তি।

তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সেই বাণীর উল্লেখ করেন যেখানে বলা হয়েছে, “মজলুমের পাশে দাঁড়াও এবং যালিমের বিরুদ্ধে থাকো।” এই নীতিই প্রতিরোধমূলক কূটনীতির মূল শিক্ষা।

তিনি বলেন, শহীদ রাইসি, শহীদ আমিরআব্দুল্লাহিয়ান ও অন্যান্য শহীদদের সরল জীবনযাপন বর্তমান নেতাদের জন্য একটি উজ্জ্বল আদর্শ। তিনি বলেন, যারা নিজেরা দুনিয়ার পেছনে ছুটছে, তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতাদের দুনিয়াপ্রীতির অভিযোগ তুলছে। কিন্তু আমাদের নেতাদের জীবনযাপনই বলে দেয়, তারা কতটা অনাড়ম্বরভাবে জীবন কাটান।

পেজেশকিয়ান ওমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শহীদ আমিরআব্দুল্লাহিয়ানের বাড়িতে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ওই মন্ত্রী শহীদের সাধারণ জীবনযাপন দেখে বিস্মিত হন। এটি ছিল একটি বাস্তব উদাহরণ যে, ইরানের কর্মকর্তারা কেমন করে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেন।

তিনি বলেন, এই সরলতা কোনো প্রচারের প্রয়োজন নেই। কাজ নিজেই কথার চেয়ে বেশি বলছে। দুনিয়ার প্রতি এই অনাসক্তিই মানুষকে সত্য ও নির্যাতিতের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি দেয়। কারণ, যে দুনিয়া হারানোর ভয় করে, সে কখনো যালিমের সামনে দাঁড়াতে পারে না। এটাই প্রতিরোধমূলক কূটনীতির ভিত্তি।

তিনি বলেন, আজকের দিনে যারা বাহ্যিকভাবে সুসজ্জিত, তারাই মানবাধিকার রক্ষার নামে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজ করছে। সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো— মানবাধিকার রক্ষার দাবি করা, অথচ শিশু, নারী, বৃদ্ধ কাউকে ছাড় না দিয়ে নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো।

তিনি বলেন, ইসলামী দেশগুলোর উচিত অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে নীরব না থাকা। হাদিসে আছে, মজলুমের আহ্বানে নীরবতা নিন্দনীয়— সেখানে বলা হয়নি মজলুম মুসলিম হোক বা অমুসলিম। আজ গাজা ও ফিলিস্তিনে অন্যায় হচ্ছে, আর কেউ যদি তা দেখে চুপ থাকে, তবে তার মুসলমান হওয়া তো দূরের কথা, তার মানবিকতাই প্রশ্নবিদ্ধ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, যে সকল কর্মকর্তা এই দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা জনগণের সেবা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। যদি ন্যায়বিচার থাকে, তবে দ্বন্দ্ব থাকে না। অধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে দখল ও সংঘাত ঘটে— যেমন আজকের বিশ্বে দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই ন্যায় ও নৈতিকতার দৃষ্টিভঙ্গি শুধু আমাদের সমাজে নয়, গোটা অঞ্চল ও বিশ্বেও প্রচার করতে হবে। যেসব শহীদের আজ আমরা স্মরণ করছি, বিশেষ করে শহীদ রাইসি— তিনি ক্লান্তিহীন একজন নেতা ছিলেন, যিনি জনগণের সেবা ও ন্যায়ের বাস্তবায়নে নিজের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েছিলেন।

শেষে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যেন শহীদদের রক্তের প্রতি লজ্জিত না হই। যদি আমাদের উদ্দেশ্য জনগণের সেবা হয়, তবে এই পথ কোনো সংঘর্ষের নয়। এটি সেবার এক বিস্তৃত ক্ষেত্র— ইরান, অঞ্চল ও গোটা বিশ্বের জন্য। আমাদের উচিত কথার পরিবর্তে কাজে নামা— এটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, এবং আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha